বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ন

১০ বছর পর দেখা মিলল বিরল পাখি বাঘা বগলা!

নিজস্ব প্রতিবেদক::

বাঘের মত ডোরাকাটা তার শরীর। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। তবে মানুষ, কুকুর, শেয়াল বা কোন কিছুর মুখোমুখি হলে প্রতিপক্ষকে হটানোর জন্য ডোরাকাটা পালক ফুলিয়ে, ডানা ছড়িয়ে, মাথার মুকুট খাড়া করে, বল্লমের মতো ঠোঁট দিয়ে আঘাত করতে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে। শিকার ধরতে নিঃশব্দে বাঘের মতোই গা ঢাকা দিয়ে ওৎ পেতে থাকে। শিকারের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে ধীর পায়ে হেঁটে আবার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শিকার তার উপস্থিতি বোঝার আগেই আক্রমণ করে। সাপ, ব্যাঙ, গিরগিটি আর নিশাচর কীটপতঙ্গ শিকার করতে অভিজ্ঞ। ঘাসের প্রান্তরে আর ঝোঁপ-ঝাড়ের আড়ালে কালো ডোরাকাটা খয়েরি পালকের এ নিশাচর পাখি সহজে কারো চোখে পড়ে না।

তার নাম বাঘা বগলা। বাঘা বগলার ইংরেজি নাম এৎবধঃ ইরঃঃবৎহ। বৈজ্ঞানিক নাম ইড়ঃধঁৎঁং ংঃবষষধৎরং। বাংলাদেশে যত পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিরল বাঘা বগলা। সে দিনে ঘুমিয়ে কাটায় এবং রাতে শিকার ধরতে বের হয় বলেও না দেখার আরেকটি কারণ।

বাংলাদেশে বিরল এই বাঘা বগলা পাখি সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন থেকে। বর্তমানে পাখিটি শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশনে আছে। সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, পাখিটি বড়শিতে রাতের বেলা মাছ খেতে গিয়ে আটকা পড়ে। পরে খবর পেয়ে উদ্ধার করা হয়। মুখে একটু আঘাত আছে, সুস্থ হলে তাকে অবমুক্ত করা হবে।

প্রায় ১০ বছর আগে সর্বশেষ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউরা চা বাগানে একটি বাঘা বগলার দেখা মেলে। তখন পাখিবিদ পল থমসনকে সাথে নিয়ে পাখিটি দেখতে আসেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাখিবিদ ইনাম আল হক। তখন বাঘা বগলা হিসেবে তাকে সনাক্ত করে হাইল হাওরে অবমুক্ত করা হয়। এরপর আর বাঘা বগলা কোথাও দেখা গেছে, এমন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন এ পাখিবিদ।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাখিবিদ ইনাম আল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে মোট ৫ প্রজাতির বগলা পাখি আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিরল হচ্ছে বাঘা বগলা পাখি। দিনের বেলায় ঘুমিয়ে থাকে এবং রাতের বেলায় শিকার ধরতে বের হয় বলে খুব একটা দেখা যায় না। শীতে আমাদের দেশে আসে গ্রীষ্মে আবার চলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র হাওর অঞ্চলে থাকতে পারে। তবে দিনের বেলায় ঘুমিয়ে থাকায় তার অস্তিত্ব জানা কঠিন। শীতের শেষে ইউরোপে চলে যায়। এদের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। সে রাতে চলাচল করে এবং অন্য প্রাণি এড়িয়ে চলে।’

এ পাখিবিদ বলেন, ‘হঠাৎ মুখোমুখি হলে সে কিন্তু ভয়ে পালায় না। বরং ভয় দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে পিছু হটানোর চেষ্টা করে তেড়ে আসে বাঘের মত সাহস নিয়ে। পাখিটির ওজন গড়ে দেড় কেজি। তবে অন্য বকের মত পা এত লম্বা নয়। সন্ধ্যা হলে সে শিকার ধরতে বের হয়। দিনের বেলা বিশ্রামে থাকে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com